মাঠে মাঠে বজ্র নিরোধক টাওয়ার নির্মানের দাবি এসএসটিএএফের
প্রকাশিত : ২৩:২৯, ৩০ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ২১:২৭, ১ মে ২০১৮
কৃষকের জীবন বাঁচাতে মাঠে মাঠে বজ্র নিরোধক টাওয়ার নির্মানের দাবি করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন সেভ দ্য সোসাইটি এন্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম (এসএসটিএএফ)। তবে দেশের হাওর অঞ্চলগুলোতে বেশি বজ্রপাত হওয়ায় দ্রুতই ওইসব অঞ্চলে বজ্র নিরোধক টাওয়ার নির্মাণের দাবি জানান। গতকাল সংস্থার সেক্রেটারি মো. রাশিম মোল্লার পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি বছরগুলোতে বজ্রপাত মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ভয়াবহ এই দুর্যোগে সারাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩৫০ জন মানুষের প্রাণ হানি ঘটছে। চলতি বছর মার্চ ও এপ্রিল মাসেই মারা গেছে ৬২ জন। এর মধ্যে ২০ জনের বেশি মাঠে ধান কাটা বা ফসলি জমিতে কাজ করতে গিয়ে মারা যায়। অন্যদের মধ্যে বেশির ভাগ মারা যায়- ফাঁকা মাঠে খেলাধুলা করার সময়, গরু-ছাগল বাড়ি আনার সময়, স্কুল থেকে ফেরার সময়, আম কুড়ানো বা অন্যান্য কাজে বাইরে বের হলে।
সংস্থার হিসেব মতে, ২০১০ সালে সারাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যু হয় ১২৪ জনের। ২০১১ সালে ১৭৯ জন, ২০১২ সালে ৩০১ জন, ২০১৩ সালে ২৮৫ জন, ২০১৪ সালে ২১০ জন, ২০১৫ সালে ২৭৪ জন, ২০১৬ সালে ৩৫০ জন, ২০১৭ সালে ৩১৫ জন এবং চলতি বছর মার্চ ও এপ্রিলের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সারাদেশে মারা যায় ৬২ জন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়- বুয়েটের অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, বজ্রপাতে নিহতদের বেশিরভাগই কৃষক। তারা প্রায়ই মাঠে কাজ করতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভেজে। এসময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে কাছে কোন বড় গাছ না থাকায় কৃষকের উপরে পড়ে মৃত্যু হয়। চলতি বছরেও যারা মারা গেছে তাদের বেশিরভাগই কৃষক। এক্ষেত্রে প্রতিটি মাঠে সরকারি বা বেসরকারিভাবে বজ্র নিরোধক টাওয়ার নির্মাণ করলে কৃষক বা সাধারণ মানুষের প্রাণহানি কমে যাবে। কারণ বজ্রপাতগুলো ওই টাওয়ার টেনে নেবে।
আবহাওয়াবিদ ড. আব্দুল মান্নান বলেন, বজ্র একটি বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ মানুষের শরীর দিয়ে প্রবাহিত হলে যেমন মারা যায়। তেমনি বজ্রপাতেও মানুষ বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায়। আকাশে বেশি মেঘ হলে মেঘের মধ্যে থাকা ঋনাত্মক আয়রন ভূপৃষ্ঠের ধনাত্বক আয়নের দিকে দ্রুত এগিয়ে এসে কাছাকাছি হলে দুটির মধ্যে সংযোগের ফলে বজ্রপাত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কালো মেঘের ঘনত্ব বেড়ে গেছে। হঠাৎ বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেড়ে গেছে। তাই বজ্রপাতের পরিমাণও অনেক বেশি হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সব সময় পরিবাহী চায়। তাই আকাশের এই বজ্র যখন মাটির দিকে আসে তখন সবার উপরে থাকা বিদ্যুৎবাহী বস্তুর উপর পড়ে। এক্ষেত্রে বড় কোন গাছ থাকলে তার উপর পড়ে। গাছ না থাকলে মানুষ বা অন্যান্য জিনিষের উপর বজ্রঘাত হয়। বজ্রপাত মোকাবিলায় লম্বা প্রজাতির গাছ লাগানোর পাশাপাশি মাঠে মাঠে বজ্র নিরোধক টাওয়ার নির্মাণ করা যেতে পারে। এতে বজ্রপাতের সময় সেগুলো টাওয়ার টেনে নেবে।
সেভ দ্য সোসাইটি এন্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম’র বজ্রপাত সচেতনতা সেলের প্রধান আব্দুল আলীম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও শিল্পায়নের ফলে পৃথিবী উত্তপ্ত হয়েছে। এতে শুধু বাংলাদেশই নয় সারা বিশ্বেই বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়েছে। বজ্রপাত এমন একটি দুর্যোগ যাকে কোন ভাবেই মানুষের পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে বজ্রপাতকে আমরা মোকাবিলা করতে পারি। সরকারিভাবে দেশের প্রতিটা মাঠে বিশেষ করে হাওর অঞ্চলের মাঠগুলোতে বজ্র নিরোধক টাওয়ার নির্মাণ করলে মাঠ এলাকায় যতো বজ্রপাত হবে সেগুলো টাওয়ার টেনে নেবে। এতে সাধারণ কৃষকের প্রাণহানি ঘটবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তাওহিদা রশিদ বলেন, অঞ্চল ভেদে বজ্রপাত কম বেশি হচ্ছে। বাংলাদেশের হাওড় অঞ্চলে বজ্রপাতের সংখ্যা বেশি। কারণ ওখানে হাওড়ের জন্য জলীয়বাষ্প বেশি হয়। সে কারণেই সিলেটের ওই অঞ্চলটিতে বর্জপাতের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
এসি
আরও পড়ুন